বায়িং হাউজে লোক নিচ্ছে— পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে চাকরির এই খবর পেয়ে অনেক আশা নিয়ে বায়োডেটা পাঠিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এক তরুণী।
তাকে বিস্মিত করে দিয়ে মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে ডাক এলো ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার। কিন্তু সেখানে ওই তরুণীর জন্য অপেক্ষা করছিল আরেক বিস্ময়।
শুক্রবার (২ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ওই তরুণী ইন্টারভিউ দিতে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানার সামনে ওয়ালটন শোরুমের ও’পরে ‘এমটিএস বায়িং হাউসে’ পৌঁছান।
এর আগের ঘ’টনার বিবরণ দিয়ে ওই তরুণী বলেন, ‘সকাল ১০টা নাগাদ কল দিলাম এবং যথারীতি আমাকে সিভি পাঠাতে বললো। সিভি পাঠানোর একঘণ্টার মধ্যে ১১টায় আমাকে কল করে জানানো হয় আজই ১২টার মধ্যে ইন্টারভিউ দিতে হবে। আমি ফ্রি ছিলাম।
এই সময়ে তাই সময়মত বের হলাম। রাশেদ নামের একজন আমাকে এগিয়ে নিতে আসলেন এবং আমাকে বললেন আপনি যদি ভালোভাবে ইন্টারভিউ দিতে পারেন আপনার জব কাল থেকে কনফার্ম। ওই লোক আরও বললেন তুমি দুইটা লাইনে কাজ করতে পারবা। কাজের ও’পর ডিপেন্ড করবে তোমার উন্নতি।’
বায়িং হাউসে পৌঁছার পর দ্রু’তই তার ডাক পড়ে বায়িং হাউসটির মালিক মুজিবুর রহমানের কক্ষে। ইন্টারভিউর শুরুতে মুজিবুর রহমান ওই তরুণীকে সাফ জানিয়ে দেন— ‘আমাদের এখানে কাজের অফার দুটি।
একটি হচ্ছে মানসম্মান নিয়ে চাকরি করবে আর বেতন পাবে ৫ হাজার। আরেকটি হচ্ছে বসকে খুশি রেখে চাকরি করবে আর বেতন পাবে ১৫ হাজার। বসের সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করার মা’নসিকতা থাকতে হবে।’
ওই তরুণী বলেন, ‘আমি এর মানে জিজ্ঞেস করলাম। উনি আমাকে বললেন বসের সাথে বাইরে ভ্রমণ করার মা’নসিকতা থাকতে হবে। বি’ষপান করতে দিলে বি’ষপান করতে হবে। সম্মানের ভ’য়ে পিছিয়ে পড়লে হবে না।’
তরুণী বলেন, ‘এসব কথা শুনে আমার হাত-পা সব ঠান্ডা হয়ে গেল। মনে মনে আল্লাহর নাম জপ করছিলাম। আর সুযোগ খুঁজছিলাম কিভাবে বের হয়ে আসবো ওখান থেকে। এতটাই ভ’য় পেয়েছিলাম যে একটাই চিন্তা ছিল পরিবারের কাছে ফিরতে পারবো কিনা। পরে তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার বাবা-ভাই কী করেন।
আমি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলাম আব্বু পু’লিশে আছেন। উনি এরপর উনার কথা পাল্টে ফে’লে বললেন, আচ্ছা তুমি যদি প্রস্তাবে রাজি থাকো কাল থেকে তোমার জয়েনিং। আমি কোনোমতে তার নাম্বার নিয়ে বললাম আমি পরিবারের সাথে কথা বলে জানাবো। ওরা আমাকে বললো পারলে এখনই জানান। আপনি না করলে অনেক মেয়ে অপেক্ষায় আছে।’
এ সময় বায়িং হাউসের ওই মালিক মুজিবুর বেশ কয়েকজন মে’য়ের ছবিসহ বায়োডেটাও দেখান। ওই তরুণী সেখানে তার এক পরিচিত মে’য়ের ছবিও দেখতে পান।
চাকরির আশায় গিয়ে এমন অশালীন প্রস্তাব পেয়ে অ’পমানে একপর্যায়ে ওই বায়িং হাউসের অফিস থেকে কৌশলে বের হয়ে যান তিনি। বায়িং হাউসের মালিক মুজিবুর তরুণীর পরিচিত যে মে’য়ের ছবি দেখিয়েছিলেন, দুপুরে বায়িং হাউস থেকে বেরিয়ে ওই মে’য়েকে ফোন করলে তিনি জানান, তাকে ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়েছে সন্ধ্যা সাতটায়। যাওয়ার সময় তাকে হিজাব ছাড়া হট পোশাক পরে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘ’টনার শি’কার ওই তরুণী ফেসবুকে ‘ডিএসসি’ নামের একটি গ্রুপে বায়িং হাউসের ঘ’টনাটি তুলে ধরেন। সেই পোস্ট চোখে পড়ে চট্টগ্রাম নগর পু’লিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার বিজয় বসাকের। এডিসি (উত্তর) আশিকুর রহমান ঘ’টনাটি ত’দন্তের দায়িত্ব নেন। যোগাযোগ করেন গো’য়েন্দা পু’লিশের এডিসি আসিফ মহিউদ্দিনও। তারা ওই তরুণীর স’ঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে অভ’য় দেন।
এরপর এমটিএস বায়িং হাউসের মালিক মুজিবুর রহমানকে বায়েজিদ থানায় ডেকে আনা হয়। এ সময় মুজিবুর তার ভু’ল স্বীকার করে ক্ষমা চান ওই তরুণীর কাছে।
পু’লিশের পক্ষ থেকে ঘ’টনার শি’কার তরুণীকে মা’মলা দিতে বলা হলেও বিড়ম্বনার ভ’য়ে তিনি তাতে রাজি হননি। শেষপর্যন্ত ভবি’ষ্যতে আর এ ধরনের কাজ করবেন না— এই মুচলেকা দিয়ে মুজিবুরকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তার পরিবারের লোকজন।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বায়িং হাউসের আড়ালে চাকরির নামে মে’য়েদের ডেকে এমন অশালীন প্রস্তাব দেওয়ার অ’ভিযোগ আগেও ছিল মুজিবুর রহমান ও তার সহকারী রাশেদের বি’রুদ্ধে। বিভিন্ন জায়গায় মে’য়ে সংগ্রহের জন্য তারা লোকও নিয়োগ দেয়। জানা গেছে, ঘ’টনার শি’কার তরুণীর যে ‘বন্ধু’ মুজিবুরের বায়িং হাউসের কথিত চাকরির খোঁজ দিয়েছিল। সেই একই ‘বন্ধু’ একই টোপ ফে’লেছিল ওই তরুণীর পরিচিত আরও কয়েকজন মে’য়ের কাছে।