৩১ জুলাই রাত নয়টা। টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কে এপিবিএনের চেকপোস্টে থামানো হয় সে’নাবা’হিনীর অবসরপ্রা’প্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্ম’দ রাশেদকে।
তখন চেকপোস্টে এপিবিএনের পোশাকে ডিউটিতে ছিলেন একজন কনস্টেবল। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামানোর দায়িত্বে ছিলেন। আর আগে থেকেই চেকপোস্টের কাছে সাদা পোশাকে উপস্থিত ছিলেন বাহারছড়া ক্যাম্পের ই’নচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলি ও এসআই নন্দলাল রক্ষিত।
এপিবিএনের ওই সদস্য চেকপোস্টে মেজর সিনহার সিলভার রঙের প্রাইভেট কারটি থামার সংকেত দেন। কারটি একটু এগিয়ে গিয়ে থামে। কাছে যান এপিবিএনের ওই সদস্য। পরিচয় জানতে চাইলে সিনহা নিজেকে সে’নাবা’হিনীর সাবেক মেজর পরিচয় দেন। এসময় তিনি মেজর সিনহাকে চলে যেতে বলেন। হঠাৎই পরিদর্শক লিয়াকত দৌঁড়ে এসে গাড়ির চালকের আসনে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান।
‘ইংরেজিতে’ নিজেকে সে’নাবা’হিনীর সাবেক কর্মকর্তা পরিচয় দেন মেজর সিনহা। এরপরপরই প্রাইভেটকার থেকে প্রথমে নামানো হয় সিনহার ভিডিও ধারণের সহযোগী সিফাতকে। স’ঙ্গে স’ঙ্গে তাকে থা’প্পড় দেওয়া হয় এবং জাপটে ধরে মাটিতে ফেলা দেওয়া হয়। যা করেন চেকপোস্টে থাকা এপিবিএনের সদস্যরা। এই ঘ’টনা দেখে সিনহা চালকের আসন থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন।
এ সময় সিনহাকে ‘হাত উঁচু’ করতে বলেই দূর থেকে পরপর দুটি গু’লি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত। সিনহার লাইসেন্স করা পি’স্তল তখন গাড়িতেই ছিল। এরপর কাছে এসে আরও দুটি গু’লি করেন পরিদর্শক লিয়াকত। এরপর স’ঙ্গে স’ঙ্গে মহাসড়কেই লু’টিয়ে পড়েন মেজর সিনহা।
৩১ শে জুলাই রাতে ঘটে যাওয়া ম’র্মান্তিক ঘ’টনার বর্ণনা দেন টেকনাফের মরিচ বুনিয়ার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। ওই সময় তিনি ঘ’টনাস্থলের কাছাকাছি থেকে সব প্রত্যক্ষ করেন।
পু’লিশের গু’লিতে সে’নাবা’হিনীর অবসরপ্রা’প্ত মেজর সিনহা মোহাম্ম’দ রাশেদ খানকে হ’ত্যার একমাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল। এরইমধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমারসহ ১৩ জনকে অ’ভিযুক্ত করা হয়েছে।
হ’ত্যার ঘ’টনায় সম্পৃক্ততা স্বীকার করে পাঁচজন আ’দালতে স্বী’কারোক্তিমূ’লক জবানব’ন্দিও দিয়েছেন। বর্তমানে ওসি প্রদীপসহ চারজনকে র্যা’ব হেফাজতে জি’জ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ তা শেষ হচ্ছে।
ত’দন্তকারী সংস্থা র্যা’ব বলছে, ত’দন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। যথাসময়ে মা’মলার ত’দন্ত কাজ শেষ করে আ’দালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
এদিকে স্ব’রা’ষ্ট্র ম’ন্ত্রণালয়ে গঠিত ত’দন্ত কমিটির প্রতিবেদন গতকাল জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা সাতদিন পেছানো হয়েছে। ত’দন্ত কমিটি মা’মলার অন্যতম অ’ভিযুক্ত ওসি প্রদীপকে জি’জ্ঞাসাবাদের সুযোগ পায়নি। এজন্যই সময় বাড়ানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না শর্তে ওই প্রত্যক্ষদর্শী ঘ’টনার দিনের অনেক বর্ণনা দেন। যেখানে বর্ণনা করেছেন মেজর সিনহা মাটিতে লু’টিয়ে পড়ার পর এপিবিএন সদস্য, ইন্সপেক্টর লিয়াকত, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার ও এসআই নন্দলালের ভূমিকা। নিজের পরিচয় প্রকাশ পেলে তাকে পু’লিশি হয়রারি করা হতে পারে বলে বারবার নিজের পরিচয় প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান এই প্রত্যক্ষদর্শী।
তিনি বলেন, ‘সিনহা গু’লিবিদ্ধ হওয়ার পর ওসিকে প্রথম ফোন দিয়ে জানান পরিদর্শক লিয়াকত। এর কিছু সময় পরেই পু’লিশের গাড়িতে ঘ’টনাস্থলে আসেন ওসি প্রদীপ। তখন তিনি সাদা পোশাকেই ছিলেন। ঘ’টনাস্থলে এসে ওসি প্রদীপ সিফাতকে হ্যান্ডকাপ পড়াতে বলেন এবং নাকমুখ দিয়ে পানি ঢালতে থাকেন। এতে সিফাত ভীষণ চি’ৎকার করতে থাকে। হ্যান্ডকাপ না থাকায় প্রদীপ তার স’ঙ্গে থাকা পু’লিশ সদস্যদের গা’লিগা’লাজ করতে থাকেন। বলেন, ‘দড়ি দিয়ে বাঁধ। নাকি সেটাও তোদের কাছে নেই?’ এসময় একজন এপিবিএন সদস্য দৌড়ে দড়ি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ততক্ষণে গু’লির শব্দে আশপাশের আরও মানুষ চেকপোস্টের কাছে জড়ো হতে শুরু করে।’
ওসি প্রদীপ এই প্রত্যক্ষদর্শীকে (ঘ’টনার বর্ণনাকারী) দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফে’লেন। তবে স্থানীয় আরও মানুষ চেকপোস্টের দিকে এগিয়ে আসায় তিনি (ওসি) কিছু বলেননি।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, ‘শ’রীরে গু’লিবিদ্ধ হয়ে মেজর সিনহা মাটিতে লু’টিয়ে পড়ে কাতরাতে থাকেন। তখন ওসি প্রদীপ লিয়াকতকে কিছু একটা বলে সিনহার কাছে যান। প্রথমে বুকে পা দিয়ে পাড়া দেন এবং পা দিয়ে গ’লা চে’পে ধরেন। তখনও নড়াচড়া করছিলেন সিনহা। এর কিছু সময় পরই নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় তার। এসময় মেজর সিনহার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দেন ওসি প্রদীপ।’ বেশকিছু সময় পু’লিশের একজন এসআই একটি গাড়িতে করে মেজর সিহনাকে ঘ’টনাস্থল থেকে সরিয়ে নেন বলেন প্রত্যক্ষদর্শী।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় এপিবিএনের চেকপোস্টে পু’লিশের গু’লিতে মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খানের মৃ’ত্যুর ঘ’টনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। ৫ আগস্ট নি’হত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বা’দী হয়ে নয়জনের বি’রুদ্ধে আ’দালতে মা’মলা করেন, যা ত’দন্তের দায়িত্ব পায় র্যা’ব।