বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটা কবিতায় বলেছিলেন,’মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মু’সলমান। মু’সলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রা’ণ।’ বাংলায় হিন্দু-মু’সলমানরা সব সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসবাস করেছে শত শত বছর ধরে। তেমনই এক অসা’ম্প্রদায়িক ঘ’টনা ঘটলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। টাকার অভাবে দরিদ্র হিন্দু ব্যক্তির শেষ যাত্রা সম্পন্ন করা যাচ্ছিল না।পাশে এগিয়ে আসে প্রতিবেশী মু’সলমানরা।
জানা যায়, বেশ বছর ক’য়েক ধরে ব’য়সজনিত অসু’খে ভুগছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রানিতলা থানার নশিপুর মানিকডাঙার বাসিন্দা গোপাল মন্ডল। রোববার সকালে তাঁর মৃ’ত্যু হয়। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে শো’কের আ’ঘাত নামে বজ্রপাতের মতো। তাঁর স্ত্রী শোভাদেবী বলেন, ‘‘স্বা’মীর সৎকার কিভাবে করব, তাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সে টাকাও নেই আমাদের।’’ জিয়াগঞ্জ শ্মশানে আনার জন্য গাড়ি ভাড়া, শ্মশানে দাহকাজের খরচ সহ সব মিলে হাজার ক’য়েক টাকা খরচ হবে। অবশেষে গোপালের অন্ত্যেষ্টিতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা মাসাদুল হল, আফরিন শেখ, ইয়াকুব আলি সহ বেশ কয়েক জন। তারপর তারা নিজেরা চাঁ’দা তোলেন গ্রামে। এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দারাও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রানিতলা থানার পশ্চিমবঙ্গের নশিপুরের মানিকডাঙা মু’সলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাম। তার মধ্যে কয়েকটি হাতে গোনা হিন্দু পরিবার রয়েছে। এদিন বাঁশ কা’টা থেকে গাড়ি ভাড়া সব কাজেই হাত লাগিয়েছেন আরফিনরা। জিয়াগঞ্জ শ্মশানেও এসেছিলেন ইয়াকুব আলি, আফরিন শেখরা। শ্রাদ্ধেও গোপালের পরিবারের পাশে তাঁরা দাঁড়াবেন বলেই জানিয়েছে। মাসুদুল রানিতলা থানার সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি করে। এদিন তিনি বললেন, ‘‘কাকিমার আজ বি’পদের দিন। এই সময় আমরা পাশে না দাঁড়াবো তো কে দাঁড়াবে?’’
গোপালের সামান্য জমি ছিল। দিনমজুরিও করতেন। ইয়াকুব বলেন, ‘‘শোভা কাকিমা অত পয়সা পাবেন কোথায়। গোপালকাকা কাজ করে যা অল্প স্বল্প পয়সাকড়ি জমিয়েছিলেন, তা সব ও’ষুধ কিনতেই চলে গিয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভগবানগোলা-২ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মকর্তা মিজানুল হক বলেন, ‘‘গোপালকাকা আমাদের গ্রামের বাসিন্দা। আমরা শুনেই গ্রামের বাসিন্দা উপেন মণ্ডল, সুরেশ মণ্ডলকে নিয়ে আলোচনা করে স’ঙ্গে স’ঙ্গে হাত লাগাই।
‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে যাতে শোভাকাকিমা দু’লক্ষ টাকা পায় সেই ব্যবস্থাও আমি করছি।’’ শোভা বললেন, ‘‘এই অবস্থায় গ্রামের মানুষ পাশে দাঁড়ালে কী যে করতাম জানি না।’’