বাবা আব্দুর রহমান, মা হাসিনা বেগম এবং ছোট ভাই সিফাতকে নিয়ে পাঁচজনের সু’খের সংসার ছিল হাসিফ ও রিফাতের। মেজ ভাই রিফাত ঢাকায় একটি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
আর হাসিফ গত বছর এইচএসসি পাস করেছে। দেশের বাইরে পড়াশোনার চিন্তাভাবনা ছিল হাসিফের। কিন্তু ঘা’তক ময়ূর-২ লঞ্চ তাদের স্বপ্ন বুড়িগঙ্গায় বিলিয়ে দিয়েছেন।
এখন পড়ালেখা তো বাদই, খাবার খেয়ে বেঁচে থাকা’টাই দায় তাদের জন্য। এমনটাই বলছে লঞ্চডুবিতে সব হা’রানো হাসিফ ও রিফাত।
বুড়িগঙ্গা নদীতে মর্নিং বার্ড ও ময়ূর-২ লঞ্চ দু’র্ঘ’টনায় মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজে’লার আব্দুল্লাহপুর এলাকার একই পরিবারের তিনজন নি’হত হয়েছেন। তারা হলেন, আব্দুর রহমান (৪৮), তার স্ত্রী হাসিনা বেগম (৩৫) এবং ছেলে সিফাত (৯)।
নি’হত আব্দুর রহমানের বড় ছেলে হাসিফ রহমান (২০) জানান, তার বাবা আব্দুর রহমান ঢাকা জজ কোর্টে কাজ করতেন। তারা পুরান ঢাকায় কোসাই টিলা এলাকায় বসবাস করতেন।
ক’রোনার কারণে তার বাবার কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা কয়েকমাস আগে তাদের দাদার বাড়ি টঙ্গিবাড়ী উপজে’লার আবদুল্লাহপুর গ্রামে চলে আসেন।
ঢাকার ভাড়া বাসার কিছু ভাড়া বাকি থাকায় বাড়ির মালিক তাদের ফার্নিচার আ’টকে রেখেছিল। গত সোমবার সেই ফার্নিচার আনতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তার বাবা, মা ও ছোট ভাই।
ওইদিন সকাল ৯টার দিকে লঞ্চডুবির ঘ’টনা ঘটলে ওই লঞ্চ থেকে সাঁতরে বাঁচা তাদের এক প্রতিবেশী জানান, তার বাবা, মা ও ভাই যে লঞ্চে ছিল। সেই লঞ্চ ডুবে গেছে।
তারপর থেকেই বাবা, মা ও ভাইয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তারা। সেদিন মা ও ছোট ভাইয়ের লা’শ খুঁজে পেলেও বাবার লা’শ খুঁজে পান মঙ্গলবার বিকেলে। নি’হত তিন জনকেই আব্দুল্লাহপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ওই বাড়িতে এখনও চলছে শো’কের মাতম। বিভিন্ন মানুষ জনের আসা যাওয়া। বিভিন্ন কথা দিয়ে, সব হা’রানো দুইভাই হাসিফ ও রিফাতকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সবাই। শো’কে পাথর হয়ে আছেন স্বজনরা।
মৃ’ত আব্দুর রহমানের মেজো ছেলে রিফাত বাবা-মা ও ভাইকে হা’রিয়ে পাথর হয়ে গেছে। কোনো কথাই তার মুখ থেকে বের হচ্ছিল না। ভাঙা কণ্ঠে শুধু বলছিল, সেদিন আমারও আব্বু আম্মুর স’ঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল।
এমনটাই প্ল্যান ছিল আম্মুর। সোমবার সকালে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে বাড়িতে থাকতে বললেন। বাড়ির সবজি বাগান ও পোষা পাখিদের দেখাশোনা করতে। ফিরে না আসা পর্যন্ত দুষ্টুমিও করতে নি’ষেধ করেছিলেন।
এ সময় তারা দুই ভাই জানান, তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আপন বলতে কেউ নেই। পড়ালেখাতো বাদই, খাবার খেয়ে বাঁচা দায় হবে তাদের।