আজকাল ব্যবসা করার জন্য শুরুতেই খুব বেশি পুঁজির দরকার হয় না। ফলে এখন ব্যবসা শুরু করতে না পারার কারণ হিসেবে ‘পুঁজির অভাব’ কথাটি আর হালে পানি পাচ্ছে না। বিনামূ’ল্যের টুলস, স্মার্টফোন অ্যাপস ব্যবহার করেই এখন বিশাল বিশাল ই-কমার্স সাইট তৈরি করা যায়। আর ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ সমস্যারও সমাধান সম্ভব। তাহলে ই’চ্ছা থাকা সত্ত্বেও লোকের ব্যবসা শুরু করতে না পারার কারণ কী?
১. শুধু স্বপ্ন দেখাতেই আ’নন্দ পান, বাস্তবায়নে নয় এই ধরনের লোকরা নিজেদেরকে প্রায়ই ‘আইডিয়া পিপল’ বা ‘ধারণা লোক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এরা শুধু তাদের স্বপ্ন নিয়ে গালগল্প করেই আ’নন্দ পান কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য যে ক’ঠোর পরিশ্রম দরকার তা করতে আ’গ্রহী নন।
২. প্রয়োজনীয় দক্ষ’তা অর্জনে অনিচ্ছুক বা অ’ক্ষম আমাদের মাঝে ব্যবসায়িক দক্ষ’তা অর্জন সম্প’র্কিত বেশ কিছু অযৌক্তিক ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন রকেট সায়েন্স সম্প’র্কিত দক্ষ’তা শুধু শ্রেণিকক্ষ বা ল্যাব থেকেই অর্জন সম্ভব। ইন্টারনেট প্রযুক্তির এই রমরমা সময়ে এ ধরনের অযৌক্তিক ধারণা বাতুলতারই নামান্তর। এখন ইন্টারনেট থেকে নিজে নিজেই যেকোনো বি’ষয়ের জ্ঞান ও দক্ষ’তা প্রায় বিনামূ’ল্যেই অর্জন সম্ভব।
৩. ব্যর্থ বা বিব্রত হওয়ার অযৌক্তিক ভ’য় প্রতিটি মানুষের মাঝেই অজানা বি’ষয়ের ভ’য় কাজ করে। বেঁচে থাকার জন্য এই ভ’য় দরকারিও বটে। কিন্তু ব্যবসায় সফল হতে গেলে এই অজানা ভ’য়কে অতিক্রম করতে হবে এবং ঝুঁ’কি গ্রহণ ও ব্য’র্থতার মধ্য দিয়েই শিখতে হবে। অনেকে আবার ভ’য়ে পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকেন এবং যেকোনো মূ’ল্যে ঝুঁ’কি এড়াতে চান। ফলে তাদের আর ব্যবসা করা হয়ে ওঠে না।
৪. সাফল্য মো’কাবিলার অযৌক্তিক ভ’য় আমার প্রায়ই দেখি যে কিছু লোক আছেন, যারা সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও হাল ছেড়ে দেন। এটা সত্যি যে, কোনো ব্যবসায় অনেক তাড়াতাড়ি সাফল্য আসলে সেই ব্যবসার মৃ’ত্যুও ঘটতে পারে। তবে সত্যিকার উদ্যোক্তারা ব্য’র্থতা থেকে যেমন শিক্ষা গ্রহণ করেন তেমনি দ্রু’ত অর্জিত সাফল্য থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যান।
৫. বাস্তববা’দী না হয়ে বরং সবকিছুতেই নিখুঁত হতে চান এমন অনেকে আছেন যারা হয়তো গত ২০ বছর ধরেই কোনো একটি প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে শুধু গবে’ষণাই করে যাচ্ছেন। কিন্তু বাজারজাত করতে পারছেন না। কারণ সেটিকে নিখুঁত করে তোলার জন্য তারা শুধু আরো গবে’ষণাই করে যেতে চান।
বর্তমান দুনিয়ার দ্রু’ত পরিবর্তনশীল বাজার ব্যবস্থায় নিখুঁত হওয়ার এই চেষ্টা ভাসমান এবং বাস্তবতার বোধশূন্য। বাস্তববা’দীরা কোনো পণ্য মো’টামুটিভাবে ভোগযোগ্য হলেই তা বাজারজাত করেন। এরপর তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চা’লিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে যান।
৬. ফোকাস ঠিক রাখা এবং বিক্ষি’প্ততা মো’কাবিলায় অ’ক্ষম কোনো ব্যবসায় উদ্যোগে সাফল্যের মূ’ল চাবিকাঠি ফোকাস ঠিক রাখা।
একই উদ্যোগের মাধ্যমে অসংখ্য বাজারে অসংখ্য জিনিস বিক্রির চেষ্টা করা করলে তাতে কোনো কিছুতেই সাফল্য আসে না। এতে বরং কাস্টমাররা হতাশ হন। ফোকাস ঠিক রাখার মানে হলো,
অগ্রাধিকারের বি’ষয়গুলোতে অনড় থাকা, জরুরি থেকে গুরুত্বপূর্ণকে আলাদা করা, সংগঠিত করা ও প্রতিনিধিত্ব করা।
৭. অজুহাত তৈরি করে দায়-দায়িত্ব এড়ানো ব্য’র্থতাগুলোকে মেনে নেওয়ার যৌক্তিক ভিত্তি সৃষ্টির জন্যই সাধারণত অজুহাত তৈরি করা হয়। এর মধ্যদিয়ে আসলে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
সত্যিকার উদ্যোক্তারা কখনো অজুহাত খাড়া করে নিজেদের ব্য’র্থতার দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যান না।
তারা বরং বাস্তব কোনো বা’ধা-বিপত্তিকে মেনে নিয়ে বিকল্প পথে পুনরায় চেষ্টা করেন। বা সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমস্যার মো’কাবিলার চেষ্টা করেন।
৮. নিজে শুরু করা, নেতৃত্ব দেওয়া বা সি’দ্ধান্ত গ্রহণে অ’ক্ষম এরা হলেন শিল্প বিপ্লবের ফল। কী করতে হবে তা বলার জন্য এরা অন্যদের ও’পর নির্ভর করেন। এরপর ভু’ল করে নিজেদেরকে পরিস্থিতির শি’কার বলে ভান করে আ’নন্দ পান। কিন্তু সত্যিকার উদ্যোক্তারা কী করতে হবে না করতে হবে তা নিজেরাই নির্ধারণ করেন,
ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখেন, নিজেই অন্যদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে ওঠেন এবং অনুসরণীয় নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যান। অন্য কেউ আপনার জন্য সি’দ্ধান্ত নেবে এবং ঝুঁ’কি ও ব্য’র্থতার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করবে এমন ভেবে যদি বসে থাকেন তাহলে কোনোদিনই আর আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না।
সুতরাং সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সহজ উপায়টি হলো সঠিক মনোভাব এবং পূর্ণ দায়িত্ববোধ লালন করা।