ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রা’ণঘা’তী ক’রোনাভা’ইরাসেে আ’ক্রান্ত রো’গীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। প্রতিদিনই গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন নতুন ক’রোনা রো’গী শনাক্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, গ’লা ব্য’থা ও শ্বাসক’ষ্ট হলেই ক’রোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছে জে’লা স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু অনেকে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সামাজিকভাবে হে’নস্তা হওয়ার ভ’য়ে নমুনা পরীক্ষা করছেন না।
এতে তাদের মাধ্যমে অন্য কেউ আ’ক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার অনেকেই আছেন যাদের উপসর্গ না থাকলেও স’ন্দে’হমুক্ত হওয়ার জন্য নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজে’লা সদরের রাধানগর এলাকার বাসিন্দা ফজলে রাব্বী। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ৯ জুন রাতে প্রচণ্ড জ্বরে আ’ক্রান্ত হন। স’ঙ্গে সর্দি-কাশিতে তার শ’রীর আরও দু’র্বল হয়ে পড়ে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ক’রোনা পরীক্ষা করতে বলা হবে- সেজন্য আর হাসপাতালে যাননি রাব্বী।
তিনি বলেন, ক’রোনাভা’ইরাসেের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখছি কেউ আ’ক্রান্ত হলে প্রশাসন গিয়ে তার বাড়ি লকডাউন করে দিচ্ছে। এতে করে আ’ক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার একঘরে হয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরাও তাদের স’ঙ্গে খা’রাপ আচরণ করে। আমাদের উপজে’লা সদরেও কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছিল প্রশাসন। এতে করে আ’ক্রান্ত ব্যক্তির পুরো পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়েছে।
ফজলে রাব্বী বলেন, পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নমুনা দেইনি। ফার্মেসি থেকে সাধারণ জ্বর ও সর্দি-কাশির ও’ষুধ এনে সেবন করছি। পাশাপাশি গরম পানির ভাপ নিয়েছি। ফলে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠেছি।
জে’লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া ত’থ্য মতে, প্রতিদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন নতুন ক’রোনা আ’ক্রান্ত রো’গী শনাক্ত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার (২৬ জুন) পর্যন্ত জে’লায় ক’রোনাভা’ইরাসেে আ’ক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৩৩ জন। এর মধ্যে মা’রা গেছেন আটজন। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও জে’লার ৯টি উপজে’লা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ক’রোনাভা’ইরাসে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
শ’রীরে ক’রোনার উপসর্গ বহন করছেন অথচ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিচ্ছেন না- এমন বেশ কয়েকজনর স’ঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। তবে তারা শর্ত দিয়েছেন নাম-পরিচয় গো’পন রাখার। শুধুমাত্র সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার ভ’য়ে নমুনা দিচ্ছেন না তারা।
জে’লার নবীনগর উপজে’লার লাউর ফতেহপুর গ্রামের এক যুবক গত ১০/১২ দিন ধরে শ্বাসক’ষ্টে ভুগছেন। এছাড়াও সারা শ’রীরে ব্য’থাও আছে তার। কিন্তু তিনি ক’রোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেননি।
তিনি জানান, ও’ষুধ সেবনের পাশাপাশি গরম পানির ভাপ নিচ্ছেন। এছাড়া লেবুর শরবত এবং আদা, দারচিনি ও লবঙ্গ দিয়ে নিয়মিত রং চা খাচ্ছেন। নিজে ভ’য় পাওয়ার পাশাপাশি পবিবারে সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। এতে করে শা’রীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন এই যুবক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মধ্যপাড়া মহল্লার এক যুবক জানান, তিনি নমুনা দেননি, অথচ গুজব ছড়ানো হয়েছে তিনি ক’রোনাভা’ইরাসে ‘পজিটিভ’ হয়েছেন। পরবর্তীতে মহল্লার ছেলেরা তার বাড়িতে গিয়ে তাকে হে’নস্তা করেন। পরিবারের সবাইকে বাড়ি থেকে বের হতে নি’ষেধ করেন। এতে করে তার পরিবারের লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পু’লিশ সুপার (সদর দফতর) আবু সাঈদ বলেন, ক’রোনাভা’ইরাসেের সং’ক্র’মণ ঠে’কাতে এখন লকডাউন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তবে আ’ক্রান্তদের বাড়ির আশপাশের মানুষজনরা যেন আ’ক্রান্তের পরিবারের স’ঙ্গে সুন্দর আচরণ করে তাদের পাশে দাঁড়ায়, সেজন্য আমরা সামাজিক সচেতনতা বৃ’দ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছি। আ’ক্রান্তদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে প্রতিবেশীরা যেন সহযোগিতা করেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্ম’দ একরাম উল্লাহ বলেন, নমুনা না দেয়ার ফলে উপসর্গ থাকা ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদেরও আ’ক্রান্ত হওয়ার ঝুঁ’কি রয়েছে। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার কাজও করছেন। এই দু’র্যোগে সবাইকে আগে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ক’রোনা আ’ক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের স’ঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। আ’ক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।